১৯৯৯ সালে আঢ্য বংশের কতিপয় উৎসাহী নবীন প্রবীনের একান্ত আগ্রহে ঢাকায় একটা মিটিং হয়-তাতে আঢ্য বংশের হারানো ঐতিহ্য এবং ভসিষ্যৎ প্রজন্ম উন্নতির জন্য কতগুলি সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। ঢাকায় একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয় এবং প্রত্যেক বাড়ীতে একটা করে স্থানীয় কমিটিও গঠন করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাদের পূব পুরুষদের হারানো ইতিহাস সংগ্রহ করার দায়িত্ব আমাকে দেয় হয়। এই কঠিন কাজটি করতে গিয়ে আমাকে বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। প্রথমত বয়বৃদ্ধ এমন লোক জীবিত নেই যার থেকে আমাদের অতীত ইতিহাস সংগ্রহ করা যায়। সকলের কথা হল এমন উদ্দোগটা আরও আগে নেয়া হল না কেন। আমিও সকলের সঙ্গে এই কথা বলতে বাধ্য হয়েছি যে, আজ পূব-পুরুষদের অবতমানে আমাকে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে সেই মহৎ উদ্দোগটা আরও কয়েক বৎসর আগে নিলে আমরা কিছু প্রবীন লোক পেতাম। যাদের সহায়তার অনেক কিছু জানতে পারতাম। একমাত্র গোলাম ছরওয়ার কাকা ছাড়া অন্য কোন প্রবীন লোকও পাইনি যার থেকে আমাদের অতীত ইতিহাস জানা যায়। উনার থেকে তবুও অনেক অমূল্য তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। আমি কেন্দ্রীয় কমিটিকে এই বলে ধন্যবাদ জানাই তাদের এই উদ্দোগের ফলে আজ আমরা অনেক বাধার মধ্যেও এই স্মরনীকাটি প্রকাশ করতে পেরেছি। স্মরনীকার তথ্য সংগ্রহ করতে আমাকে প্রত্যেক ঘরে বার বার যেতে হয়েছে। এতে আমাকে এমন রূঢ় কথা শুনতে হয়েছে যে আপনার বুঝি আর কোন কাজ নেই। আপনি ঐ সব বাজে লোকের কথায় বাজে কাজ করতেছেন। ঐ সব দিয়ে কি হবে। আঢ্য কল্যান সমিতি করে কি লাভ হয়েছে। ঐ সব বাদ দিয়ে ঘরে বসে থাকেন। আবার কাহারও কাছ থেকে এমন উৎসাহ পেয়েছি যে আমি তথ্য সংগ্রহ বা সংশোধনের কাজ ঘন্টার পর ঘন্টা করতেও ক্লান্তি বোধ করিনি। আমাদের কল্যান সমিতির প্রধান কাজ ছিল বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সেই কাজটি করতে গিয়ে আমিও কিছু সমালোচনার মুখে পছি তা আমার নতুন প্রজন্মের সাথীরা অনুভব করছেন কিনা তা আমি বুঝতে পারছি না। সব কাজে যে সফলতা আসবে এমন কোন কথা নেই। এরপরও আমি বৃকভরা আশা নিয়ে বসে থাকবো কবে আমাদের বালিকা বিদ্যালয়টি আলোর মুখ দেখবে।
আমাদের কিছু সংখ্যক লোক আমাদের কল্যান সমিতির সমালোচনা করে থাকেন। আমি আজ তাদের উদ্দেশ্যে বলবো আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহযোগিতায় আমরা প্রতি বৎসর ঈদে গ্রামের অসহায় পরিবারকে শাড়ি এবং লঙ্গি দিয়ে আসতেছি। আশা করি আমাদের এই প্রয়াস ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। আমাদের এই বংশের কিছু লোক দারিদ্রের নিম্ন সীমায় অবস্থান করায় আমরা তাদেরকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহায়তায় কাহাকেও রিক্সা, কাহাকেও সেলাইর মেশিন এবং কাহাকেও গাভী ক্রয় করে দিয়েছি। আর অসহায় পরিবারকে নগদ টাকা দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। এতকিছু করার পরও আমাদের বংশের কিছু কিছু চেনা ভদ্রলোক আমাদের সমালোচনা করে থাকেন। সকলে মিলে এদের মুখ বন্ধ করতে হবে।
যদিও কালের আবতনে আজ আমাদের আঢ্য বংশের মধ্যে কিছুটা নিম্নগতি লক্ষ্য করা যায়, কিন্তু আমাদের পূব-পুরুষেরা এককালে খুবই ধনাঢ্য এবং জোতদার ছিলেন। আমাদের পূব-পুরুষেরা লেখাপড়ায় কোন অংশে কম ছিলেন না। ১৯২০ সালে মরহুম জনাব তরিক উল্যা মাষ্টার সাহেব বি.এ পাশ করেন। ১৯৩০ সালে মরহুম জনাব লকিয়ৎ উল্যা চৌধুরী সাহেব বি.এ পাশ করেন। ১৩০ সালে মরহুম ডাঃ মোজাফ্ফরুল ইসলাম সাহেব ডাক্তারী পাশ করেন। ১৯৩৭ সালে মরহুম জনাব মাযহারূল ইসলাম চৌধুরী এম.এ, বি.টি পাশ করে আজীবন চাটখিল হাই স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন। উনার জীবনের প্রধান কৃতিত্ব চাটখিল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের দুভাগ্য চাটখিল কলেজের নাম উনার নামে হল না।
এই স্মরনীকাটি লেখার প্রধান উদ্দেশ্য হল আমাদের আঢ্য বংশের অতীত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রাখা। আমরা অনুসন্ধান করতে গিয়ে যতটুকু জানতে পেরেছি, তা হলো রনগাজী ছিলেন আমাদের আদি পুরুষ। উনি কোথা থেকে কখন এখানে এসছেন তা আমরা এখনও উদ্ধার করতে পারিনি। উনার দুই ছেলে আফসার উদ্দি আঢ্য ও বদর উদ্দিন আঢ্য। বড় ছেলে আফসার উদ্দিন আঢ্য বাড়ীর উত্তর অংশে এবং ছোট ছেলে বদর উদ্দিন আঢ্য বাড়ীর দক্ষিণ অংশে বসবাস আরম্ভ করেন। এই দুইজন থেকে কয়েক সিড়ি অতিক্রম করে আজ আমরা কয়েক শত নারী-পুরুষ কয়েকটা বাড়ীতে বসবাস করছি। আমাদের কিছু লোক পরানপুর, ভীমপুর এমনকি যশোরে বসবাস করছে।
পরিশেষে আমি আমার শ্রদ্ধেয় কাকা এ.টি.এম হারুন-উর-রশীদ চৌধুরী সাহেবের কথা না বললে উনার প্রতি অবিচার করা হবে। আজ আমি সত্য কথা বলতে বাধ্য হয়েছি যে, উনার ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং উৎসাহ না পেলে আমি এই কাজে এতটুকু অগ্রসর হতে পারতাম না। উনার ইচ্ছা পুরন করার জন্য আমাকে বার বার প্রতি ঘরে গিয়ে স্মরনীকাটি ৩/৪ বার সংশোধন করতে হয়েছে। উনার উৎসাহে আমি কষ্টকে কষ্ট মনে করিনি। আপনাদের মনে রাখতে হবে এই স্মরনীকাটি কোন বই নয়, যা একবার/দুইবার সংশোধন করলে শুদ্ধ হয়ে যাবে। এইটা এমন একটি চলমান স্মরনীকা যা প্রতিনিয়ত পরিবতনশীল। প্রতি বৎসর কেউ না কেউ মরবে আবার কেউ না কেউ জন্ম নিবে। ফলে এই স্মরনীকাটি চলমান ও পরিবতনশীল। তাই সকলে ভুল ত্রুটিগুলি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্ঠিতে দেখবেন বলে আমি আশা করি।
এ.কে.এম. গিয়াস উদ্দিন