(১৯০৬-১৯৮২)
পিতাঃ মরহুম জনাব ওয়াজিদ আঢ্য
আমার পিতা আলহাজ্ব মরহুম ডাঃ মোজাফ্ফারুল ইসলাম সাহেবের জন্ম ১৯০৬ সালে। উনার পিতা অর্থ্যাৎ আমার দাদা ছিলেন মরহুম জনাব ওয়াজিদ আঢ্য। আমার দাদা তিন ছেলে এক মেয়ে রেখে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে ১৯১৩ সালে মারা যান। তখন আমার পিতার বয়স সাত বৎসর। উনি উনার পিতার কথা কখনও স্মরণ করতে পারতেন না। উনি ভাই বোন সকলের মধ্যে বড় ছিলেন। উনার ভাই বোনদেরকে উনার দাদা-দাদী লালণ পালন করে লেখাপড়া করিছেন। তবে উনার (আমার পিতা) লেখাপড়ার প্রধান দায়িত্ব পড়ে উনার চাচা জিতু মাষ্টারের উপর। জিতু মাষ্টার যখন ফরাশগঞ্জে চাকুরী করতেন। তখন উনাকে সেইখানে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। সেইখান থেকে উনি ১৯২৪ সালে প্রথম বিভাগে মেট্টিক পাশ করেন। পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য বরিশাল বি.এম কলেজ ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯২৬ আই.এস.সি পাশ করেন। পরে ঢাকা মেডিকেল স্কুল থেকে ১৯৩০ সালে ডাক্তারী পাশ করেন।
প্রথম জীবনে উনি জলপাইগুড়ির এক চা বাগানে চাকুরী করেন। সাত বৎসর সেখানে চাকুরী করার পর দেশে এস উনার চাচা গোলাম রহমান সাহেবের দোকানের দক্ষিণ অংশে ডাক্তারী আরম্ভ করেন। তখন আমাদের এলাকায় কোন পাশ করা ডাক্তার ছিল না বলে উনার নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই সুনাম উনার মৃত্যুর এত বছর পর আজও আছে। উনি গরীব লোকদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতেন। এমনকি ঔষধের খরচও নিতেন না। তিনি জীবনে অনেক টাকা রোজগার করেছেন। কিন্তু রাখতে পারেন নাই। উনি ছিলেন শিল্পমনা এবং অনেকটা খেয়ালী ধরনের। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান করেও শেষ রক্ষা করতে পারেন নাই। গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে শরীক হয়ে তাঁতের মোটা (খদ্দের) কাপড় তৈরি করেন। পরে কয়ার ইন্ডষ্টিজ দেন। নিজ বাড়ীতে নারিকেলের আঁশ থেকে পাপষ, দোরড়ার দড়ি তৈয়ার করেন। নারিকেল থেকে তৈল বাহির করার জন্য ঘানি বসান। নিজের অভিজ্ঞতার অভাবে সেগুলি ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি কয়েক প্রকার ঔষধও তৈরী করে ছিলেন।
তিনি সামাজিক কমকান্ডের সাথেও জড়িত ছিলেন। একাধিকবার চাটখিল স্কুলের সেক্রেটারী ছিলেন এবং আজীবন স্কুল কমিটির মেম্বার ছিলেন। চাটখিল হাই মাদ্রাসার এবং জুনিয়র মাদ্রাসার সেক্রেটারী ছিলেন। একবার ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্যও ছিলেন। (এইসব কমকান্ডের মধ্যেও তিনি একটি কাজ নিয়মিত করতেন। তাহলো লেখালেখি। এই লেখালেখির মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিল। তিনি কোরআনের তরজমা করছিলেন। এই কাজটি উনি অবশ্য শেষ করত পারেনি। তবে প্রায় শেষ করে এনছিলেন। আমার মনে হয় এই একটি কাজ উনি অসমাপ্ত রেখে যান। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা তার এই কাজের সঠিক মুল্যায়ন করতে পারিনি। তাই সেগুলো শেষ পযন্ত উইপোকার পেঠে যায়।)
উনি খুব ধম ভিরু লোক ছিলেন এবং ধর্মের প্রতিও উনার গভীর জ্ঞান ছিলো। ১৯৫৭ সালে হজ্জ্ব পালন করেন। আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং প্রবল ইচ্ছা শক্তির কারনেই উনি এতিম হয়েও, জীবনে উন্নতি করেছেন। উনার ভাইয়েরাও লেখাপড়া শিখে বড় হয়েছে। উনার ছোট ভাই আজাহারুল ইসলাম গুরু ট্রেনিং করে সারা জীবন মাষ্টারী করে জীবন চালান।
১৯২৮ সালে উনি উনার চাচা জিতু আঢ্য সাহেবের মেয়ে ছাফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন। উনার ওয়ারিশ হিসেবে আমরা দুই ভাই দুই বোন জীবিত আছি। আমার বড় ভাই এ.কে.এম গিয়াস উদ্দিন সাহেবের ৩ ছেলে ১ মেয়ে। বড় ছেলে গাজীপুর ধান গবেষনা কেন্দ্রে সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার হিসেবে কমরত এবং বতমানে ময়মনসিংহ এগ্রিকালচার ইউনিভারসিটিতে পি.এইচি.ডি করতেছে। মেজ ছেলে এম.বি.বি.এস পাশ কর বি.সি.এস ডাক্তার হিসেবে চাটখিল থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমরত এবং ছোট ছেলে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং পাষ বরে ঢাবায় চাকুরী করে। আর একমাত্র মেয়ে বি.এ পাশ করার পর বিয়ে হয়ে যায়। আমার ১ মেয়ে ১ ছেলে। মেয়ে বতমানে বি.এস.সি (অর্নাস) এ অধ্যায়নরত এবং ছেলে আই.এস.সি ফলপ্রার্থী। আমার স্ত্রী স্কুল শিক্ষায়ত্রী। আমি এম.এ পাশ করে জনতা ব্যাংকে চাকুরী করছি।
আমার বড় ভাই অবসর গ্রহনের পর থেকে আঢ্য বংশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। যার ফলেই আজ এই স্মরনিকাটি প্রকাশ হচ্ছে। উনার এই উদ্যোগটি খুবই প্রশংসনিয় একটি উদ্যোগ। এতে যেমন লাভবান হবে এই প্রজন্ম তেমনিভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও লাভবান হবে বলে আমি মনে করি। এই উদ্যোগের ফলে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা আঢ্য বংশের লোকজনকে একে অন্যের সাথে সহজেই পরিচিত করে তুলবে।
পরিশষ আমি কমিটির কাছে একটি অনুরোধ রাখতে চাই যে, উনারা যেন বৎসরে একবার হলেও বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা আঢ্য বংশের সবাইকে একসাথে করেন।
এ.এম.এম শামছুদ্দিন মোহসিন