(১৯০৯-১৯৭৮)
পিতাঃ মোঃ মাইন উদ্দিন আঢ্য
আমার পিতা মরহুম জনাব মাযহারুল ইসলাম চৌধুরী সাহেবের জন্ম ১৯০৯। আমার দাদা মরহুম জনাব আবদুল আজিজ চৌধুরী সাহেবরা ৪ ভাই ছিলেন। আমার দাদা সব ভাইদের মধ্যে বড় ছিলেন। আমার ছোট দাদা মরহুম জনাব লকিয়ৎ উল্ল্যা চৌধুরী সাহেব ১৯৩০ সালে বি.এ পাশ করেন। আমার এই দাদাই আমাদের বংশে প্রথম বি.এ পাশ করেন। আমার পিতা ১৯২৬ সালে মেট্টিক পাশ করেন এবং ১৯৩৪ সালে এম.এ.বি.টি পাশ করেন। তারপর উনি চাটখিল স্কুলের এ্যাসিসন্টে হেড মাষ্টার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে ভারতবষ স্বাধীন হওয়ার পর অতুল প্রসাদ দত্ত ভারতে চলে গেলে আমার পিতা হেড মাষ্টার হন এবং ৩১ বৎসর তিনি হেড মাষ্টার ছিলেন।
আমার পিতা যশ, নাম বা সম্মানের জন্য লোভী ছিলেন না। যদি তার সেই লোভ থাকত তা হলে তার জীবদ্দশাই তার নিজের নামে অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম রেখে যেতে পারতেন। তিনি গ্রামকে ভালবাসতেন। তাই কোন সরকারী চাকুরী গ্রহন করেননি। পুলিশ অফিসারের চাকুরী পেয়েও শিক্ষার মায়া ত্যাগ করে যোগদান করেননি। আজীবন দেশের সেবা করে গেছেন। উনার বহু ছাত্র উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বড় বড় পদে চাকুরী করছেন। উনার মত ত্যাগী পুরুষের কারনে চাটখিল অঞ্চল এত উন্নত। যার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আজকের চাটখিল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় এবং চাটখিল সরকারী ডিগ্রি কলেজ। তিনি গ্রামে গ্রামে পায়ে হেটে কলেজের জন্য চাদা উঠিয়েছেন এবং প্রাক্তন ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, যে কলেজের জন্য বৃদ্ধ বয়সে এতো পরিশ্রম করেছেন সেই কলেজ উনার নামে না হয়ে অন্যের নামে হয়েছে। যা এলাকাবাসী কোনদিন মেনে নেয়নি। তিনি বহু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। উনার মত একজন সৎ, ন্যায়পরায়ন চরিত্রের লোক খুব কমই দেখা যায়। কালের আবতনে আমরা হয়ত একদিন তাঁকে ভুলে যাব, কিন্তু উনাকে যাতে চির স্মরণীয় করা যায় সেই উদ্দেশ্যে আমাদের আঢ্য কল্যান সমিতির পক্ষ থেকে উনার নামে একটা বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য উদ্দোগ নেয়া হয়। সেই উদ্দ্যেশে ২০০০ সালে শিল্পপতি রয়েল ফারুকের দশতলা বিল্ডিংয়ের সভাকক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সভায় উনার প্রাক্তন ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক জনাব ডঃ আবুল খায়ের, বাংলাদেশ সরকারের নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচীব জনাব আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষাবিদ জনাব এ.কে.এম আবদুর রব এবং উনার প্রাক্তন কৃতি ছাত্র মন্ডলী উপস্থিত ছিলেন। সকলে এক বাক্যে উনার নামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে মত দেন। যার ফলে আমরা স্কুল বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসি। যদিও আপাতত স্কুলের কাজ বন্ধ আছে।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আমার পিতা মরহুম জনাব মাযহারুল ইসলাম চৌধুরী সাহেবের জীবনি এই স্বপ্ন পরিষরে লেখা সম্ভব নয়। আমার ভাই গিয়াসউদ্দিন সাহেবের ঐকান্তিক চেষ্টায় আমরা যে স্মরনিকাটি বের করলাম তাতে হয়তো উনাকে সকলের কাছে আরও কিছুদিন স্মরনীয় রাখা যাবে। আমার ভাইয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমরা আঢ্য বংশের হারানো এবং অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি। আমি উনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং উনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
পরিশেষে আমি এই বলে আমার লেখা শেষ করতে চাই যে, আমরা আট ভাই ও তিন বোন ছিলাম। আমার বড় তিন ভাই অকালে মৃত্যুবরণ করেন এবং আমার ছোট ভাই মোরশেদ অল্প বয়সে মারা যায়। আমার ছোট দুই ভাই ফরিদুল আলম চৌধুরী ও ওহিদুল আলম চৌধুরী মাষ্টার ডিগ্রি শেষ করে বতমানে ভাল চাকুরীতে কমরত। আমি সেনা বাহিনীতে লেপ্টেনেন্ট কর্নেল থেকে অবসর নিয়ে আমার দুই মেয়ে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছি।
নুরুল আলম চৌধুরী (নুরু)